৭) মূলজমি তৈরী—
জমিতে উপযুক্ত পরিমাণ জৈবসার দিয়ে চাষ দেওয়ার ১-২ দিন আগে জল ঢুকিয়ে সোজাসুজি ও আড়াআড়িভাবে ৩-৪ বার চাষ দিয়ে কাদা তৈরী করে সাতদিন ধরে পচতে দিতে হবে। পরে উপযুক্ত পরিমাণ সার দিয়ে আবার চাষ দিয়ে জমি সমতল করে নিতে হবে। যদি আগের মরশুমে ঐ জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকে তবে চাষ দিয়ে জমি পচানোর কাজ ও পরে চাষ দিয়ে জমিতে পড়ে থাকা বীজ থেকে ও গোড়া থেকে গজিয়ে ওঠা ধান গাছগুলি ভালো করে মেরে ফেলতে হবে, নইলে সেখান থেকে বেড়ে ওঠা ধান গাছ থেকে বীজে মিশ্রণ আসার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
৮) চারার দূরত্ব এবং চারা লাগানো—
চারার দূরত্ব বিভিন্ন জাতের মেয়াদ, মরশুম, মাটির উর্বরতা এবং চাষ প্রণালীর উপর নির্ভরশীল। যেসব জাতের পাশ কাঠির সংখ্যা কম হয় সেক্ষেত্রে ১৫ × ২০ সেমি এবং বেশী জাতের পাশকাঠি ছাড়া বা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে ২০ x ২০ সেমি দূরত্বে চারা বসাতে হবে।
বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিটি গুছিতে একটি করে উপযুক্ত চারা বসানো উচিত। প্রথম দিকে জমি পাতলা রোয়া দেখতে লাগলেও তার পরে ঠিক হয়ে যায় বেশী পাশকাঠি বেরিয়ে। যদি চারার বয়স কোন কারণে বেশী হয়ে যায় বা জমিতে জলের চাপ বেশী থাকে তবে একটা জায়গায় প্রতি গোছে ২-৩টি চারা লাগানো যেতে পারে। লাইনগুলি পূর্ব-পশ্চিম অভিমুখী হলে জমিতে বেশী রোদ প্রবেশ করবে। তাতে গাছের বৃদ্ধি ও জমিতে গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
জমিতে রোগ পোকার উপদ্রব কমাতে ও পরিচর্যার সুবিধার জন্য ৮ থেকে ১০ সারি পর পর একসারি ফাঁকা রাখতে হবে। এর জন্য ফলনের কোন তারতম্য ঘটে না।
৯) সেচ
কৃষক ধানের জমিতে জল দাঁড় করিয়ে রেখে চাষ করতে অভ্যস্ত। জমিতেই ছিপছিপে জল রেখে ভালোভাবেই বীজ উৎপাদন করা যায়। জমিতে জল বেশিদিন জমে থাকলে শস্যের ক্ষতি হয়। বেশী জল চাপে পাশকাঠি কম বেরোয়, ফলে ফলন কমে। জমিতে বেশীদিন জল ধরে না রেখে পর্যায়ক্রমে জমি থেকে জল বের করে দিয়ে পুণরায় হালকা করে সেচ দিলে ভালো ফলন হয়। অনেকদিন জল জমে থাকলে লোহা ও ম্যাঙ্গানিজ বহুলাংশে নিঃশেষ হয়ে যায় এবং জমিতে ক্ষতিকারক নানান জৈব অম্ল, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাস জমা হয়। অক্সিজেনের অভাবে নাইট্রোজেনের গ্রহণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। গাছের সুষম বৃদ্ধি ব্যহত হয়। মনে রাখতে হবে ফুল আসার পর থেকে দানা পরিপক্ক হবার সময় পর্যন্ত যেন জমিতে যথেষ্ট রস থাকে। না হলে দানার পুষ্টতা ব্যহত হবে। চিটে বীজের, অপুষ্ট বীজের সংখ্যা বেড়ে বীজের ফলন ও গুণমান কমিয়ে দেবে।
১০) সার প্রয়োগ
ধান চাষে যেভাবে সার প্রয়োগ করা হয় জমির অবস্থান, জাতের মেয়াদ ও মরশুমের উপর নির্ভর করে, বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিষয়টা সেরকমই। অপুষ্টি ও অণুখাদ্যের অভাব বীজের গুণমানের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, মাটি পরীক্ষার ভিত্তিতে সুষমহারে জৈব, জীবাণু ও রাসায়নিক সার যথাসময়ে প্রয়োগ করতে হবে।
(১১) মাধ্যমিক পরিচর্যা ও আগাছা নিয়ন্ত্রণ
মাটির ভেতরের দূষিত গ্যাস বের করা এবং অক্সিজেনের চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে মাটি মাঝে মাঝে ঘেঁটে দেওয়া দরকার। এতে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং হিতকর জীবাণুগুলি ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে। প্রতি ১৫দিন পরপর জাত অনুসারে ২-৩ বার আগাছা নিড়ানোর সময় বা সার প্রয়োগের পর মাটি ঘেঁটে দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে ধানের যে সব রোগ বা পোকা লাগে তার বেশির ভাগই আগে আগাছায় তাদের বংশবিস্তার করে। তাই উপযুক্ত সময় আগাছা জমি থেকে সরিয়ে দিলে তা শুধু ফসলের খাদ্যের যোগান ঠিক রাখে না, ফসলকে সুস্থ রাখতে অনেকটাই সাহায্য করে।
আরো বিস্তারিত পড়ুন—