বেগুন | শীতকালীন বেগুন চাষ পদ্ধতি

  1. বেগুন

জল দাঁড়ায় না, ছায়া পড়ে না এবং পর্যাপ্ত পরিমান আলো-বাতাস আছে এরকম উঁচু, দোঁয়াশ মাটি যুক্ত জমি বীজ উৎপাদনের জন্য বেছে নেওয়া দরকার। বীজ শোধন, বীজতলা শোধন, পরিচর্যা, ফসল তোলা সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বেশী সতর্ক হওয়া দরকার। এমন জমি বেছে নিতে হবে যেখানে আগের বছর এই গোত্রের ফসল চাষ হয়নি। চাষের সময় তাপমাত্রা থাকবে ১৮°-২৫°সে.।

বেগুন পার্ট ২ | বীজতলা থেকে চারা তোলা এবং মূল জমিতে চারা রোপণ

বেগুন বীজতলায় বীজ বোনার সময়

বীজতলায় বীজ বোনার সময় — যদিও সারা বছরে ২-৩ বার বেগুন চাষ হয় তবে বর্ষাকালের ফসল থেকে সবচেয়ে উন্নত মানের বীজ পাওয়া যায়। এজন্য জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি থেকে আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বোনার আদর্শ সময় এবং ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা মূল জমিতে রোপণ করা দরকার।

বেগুন বীজ সংগ্রহ এবং বীজ শোধন

বীজ সংগ্রহ এবং বীজ শোধন—–বীজ উৎপাদনের জন্য বীজের মান খুব ভালো হতে

হবে। বিশ্বস্ত উৎস থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ উৎপাদনের জন্য পরিবর্ধক (Breeder seed) বীজ বা আধারীয় বীজ (Foundation seed) আবশ্যক। একান্ত না পাওয়া গেলে অবশ্যই শংসিত বীজ ব্যবহার করতে হবে।

বীজ বোনার আগে অবশ্যই বীজ শোধন করে নিতে হবে। এজন্য দুই ভাবে বীজ শোধন করা যেতে পারে। শুরুনো শোধন অথবা ভেজা শোষন।

(ক) শুকনো শোধন

(ক) শুকনো শোধন—প্রতি কেজি বীজের জন্য ২-৩ গ্রাম থাইরাম, ক্যাপটান বা কার্বেগুাজিম জাতীয় ওষুধ বীজের সঙ্গে মিশিয়ে মুখ বন্ধ পাত্রে ৮-১০ মিনিট ভালো করে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।

(খ) ভিজিয়ে শোধন

(খ) ভিজিয়ে শোধন—কার্বেণ্ডাজিম (৫০ শতাংশ) ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে ঐ ওষুধ গোলা জলে বীজ ২৫-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে।

বেগুন বীজতলা তৈরী এবং শোধন

বীজতলা তৈরী এবং শোধন—বর্ষাকালে উঁচু বীজতলা করা দরকার। ১ বিঘা মূল জমিতে রোয়ার জন্য ১ মিটার চওড়া এবং ৬ মিটার লম্বা একটি বীজতলা করতে হবে। বীজতলায় বীজ বোনার ৩ সপ্তাহ আগে প্রয়োজনীয় জৈবসার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর জমির উপরে বিচুলি (খড়) বা শুকনো লতা-পাতা ৩ ইঞ্চি পুরু করে বিছিয়ে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে। এতে বীজতলার মাটিতে থাকা বিভিন্ন রোগের জীবাণু এবং পোকা-মাকড় ধ্বংস হবে।

এরপরে আরও ভালো করে শোধনের জন্য প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ১০ লিটার জলে ৬০ মিলি হারে ফর্মালিন গোলা জলে বীজতলার মাটি ২-৩ ইঞ্চি গভীরতা পর্যন্ত ভিজিয়ে পলিথিন দিয়ে ৭-১০ দিন ঢেকে রাখতে হবে। পরে পলিথিন সরিয়ে দিয়ে মাটি ভালো করে কুপিয়ে গ্যাস বের করে দিতে হবে। এর ১০ থেকে ১৫ দিন পরে ঐ বীজতলায় শোধন করা বীজ বোনা যাবে।

এছাড়া শুধু মোটা, স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে বীজতলার মাটি ১০-১২ দিন ঢেকে রাখলে পলিথিনের ভিতরে যে তাপের সৃষ্টি হয় তাতেও বীজতলার মাটিতে থাকা বিভিন্ন রোগ জীবাণু ধ্বংস হয়।।

বীজের হার

বীজের হার—প্রতি কাঠা জমির জন্য উন্নত মানের ৩ থেকে ৩.৫ গ্রাম বীজ দরকার হয়।

ৰীজতলায় বীজ বপণ ও পরিচর্যা — বীজতলায় বীজ বোনার পর জৈব সার মেশানো ঝুরো মাটি দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে এবং হাল্কা করে খড় এর আচ্ছাদন দেওয়া যেতে পারে। বীজ বোনার ৬-৭ দিন পরে চারা বেরোলে খড় তুলে নিতে হবে। বর্ষার হাত থেকে রক্ষার জন্য বীজতলায় ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন মত ঝারির সাহায্যে হাল্কা সেচ দিতে হবে। বীজতলায় আগাছা পরিষ্কার রাখা দরকার।

বীজতলায় রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। চারা বের হওয়ার ৫-৭ দিন পরে প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাক নাশক এবং সঙ্গে ২ মিলি নিমতেল (১০,০০০ পি.পি.এম) মিশিয়ে স্প্রে করা দরকার।

চারাগাছের ৩ টি পাতা হয়ে গেলে ০.২ মিলি/লিটার হারে ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় ওষুধ স্প্রে করে বিভিন্ন রস শোষক পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

চারা তোলার ৩-৪ দিন আগেও এই ওষুধ আর একবার ব্যবহার করলে পরবর্তীতে ভালো ফল পাওয়া যায়।

মূল জমি তৈরী এবং সার প্রয়োগ—চারা লাগানোর ২০-২৫ দিন আগে বিঘা প্রতি ১৫ ২০ কুইন্টাল জৈব সার প্রয়োগ করে এর ৭ দিন পরে ২ কেজি পি.এস.বি এবং ২ কেজি অ্যাজোটোব্যাক্টর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে।

শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি ১০ কেজি নাইট্রোজেন, ১৩ কেজি ফসফেট এবং ৬.৫ কেজি পটাশ মূল সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে। এরপর ৫ কেজি করে নাইট্রোজেন এবং ৩.৬ কেজি করে পটাশ চারা রোয়ার ৩০ এবং ৪৫ দিনের মাথায় চাপান হিসাবে জমিতে দিতে হবে।

পড়া চালিয়ে যান

বীজতলা থেকে চারা তোলা এবং মূল জমিতে চারা রোপন

বেগুন পার্ট ২ | বীজতলা থেকে চারা তোলা এবং মূল জমিতে চারা রোপণ