১৭) বীজ সংরক্ষণ
পরের মরশুম পর্যন্ত জীবন্ত ভ্রূণ সহ বীজকে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। বীজের আর্দ্রতা সঠিকভাবে কমলেই তা সংরক্ষণ করা উচিত। বীজ নতুন বা পুরানো চটের বা কাপড়ের প্যাকেটে সংরক্ষণ করা উচিত। পুরানো বস্তা বা প্যাকেট হলে দেখে
নিতে হবে তার ভেতরের সেলাইয়ের দিকে আগের কোন বীজ থেকে গেছে কিনা, থাকলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। চটের বস্তায় একমাত্র ভালো মানের পুষ্ট ও নীরোগ বীজই সংরক্ষণ করা উচিত। বীজের সাথে শুকনো নিমপাতা, নিশিন্দাপাতা বা শুকনো লঙ্কা মিশিয়ে রাখলে সহজে পোকা লাগে না। বীজ কখনই ১৩ শতাংশ আর্দ্রতায় পলিথিনের প্যাকেটে বা ড্রামে বা গোলায় রাখা উচিত নয়। তাতে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা কমে যায়। ধানের গোলায় বীজ রাখলে তা চটের বস্তা বন্দী করে ফাঁকা ফাঁকা ভাবে রাখতে হবে। বীজের বস্তা শুকনো ও ঠাণ্ডা জায়গায় রাখা উচিত, সরাসরি মেঝেতে বা দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে রাখা উচিত নয়।
সাধারণতঃ কাঠের পাটাতনের উপর বা পলিথিনের উপর বস্তা দেওয়াল থেকে দূরে সাজিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের রাজ্যে এক খরিফ মরশুমে তৈরী বীজ পরের খরিফ মরশুম পর্যন্ত সংরক্ষণে বিশেষ অসুবিধে হয় না, যেহেতু মাঝের সময়ে আবহাওয়া শুকনো থাকে। কিন্তু এক বোরো মরশুম থেকে পরের বোরো মরশুম পর্যন্ত মাঝে বর্ষা থাকায় বীজ সংরক্ষণ করা কঠিন হয়। সেক্ষেত্রে বীজ মাঝে মাঝে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে বের করে শুকিয়ে নিতে পারলে অনেকটাই ভালো থাকে। বীজে কেড়ি পোকার আক্রমণ দেখা দিলে বস্তার গায়ে। হালকা করে ডাইক্লোরভস জাতীয় ওষুধ প্রতি লিটার জলে এক মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। বীজের আর্দ্রতা যত কম হবে বীজ তত ভালোভাবে পোকা ও রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে বেশী দিন সংরক্ষণ করা যাবে।
সীড বিন বা বীজ বিনে বীজ সংরক্ষণ করা সবচেয়ে বিজ্ঞান সম্মত ও লাভ জনক। ধাতব বীজ বিন (Metallic seed bin) বিভিন্ন মাপের হতে পারে। ভালো করে শুকানো বীজ এই বীজ বিনে দীর্ঘদিন ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়।
বীজ ধানের ফলন—
বীজ ধানের ফলন সাধারণ ধানের মতোই। তবে চিটে ধান, অপুষ্ট ধান বাদ দিয়ে একই আকার, আয়তন ও ওজন যুক্ত বীজগুলিকে যখন বীজ প্রক্রিয়াকরণ (Seed processing) এর মাধ্যমে বাছাই করে নেওয়া হয় তখন ৮-১০% ধানের ওজন কম হতে পারে।