বীজগ্রাম
বীজগ্রাম হলো বীজ উৎপাদনের গ্রাম বা বীজের গ্রাম। অর্থাৎ বীজ উৎপাদনের জন্য নির্বাচিত ফসলের গ্রাম। বিষয়টা শুনতে নতুন লাগলেও প্রকৃত অর্থে বীজ গ্রামের আভিধানিক অর্থ এবং অর্ন্তনিহিত অর্থ সেটাই। সাধারণভাবে আমরা বুঝি গ্রামের মানুষ বীজ উৎপাদন করবে- সেটাই হবে বীজ গ্রাম। গ্রাম বলতে আমরা বুঝি বিস্তৃত ভূখন্ডের মধ্যে জায়গায় জায়গায় সন্নিবিষ্ট জনবসতি। গ্রামের নামের সাথে অনেক সময় জাতি বা গোষ্ঠীর নামও জড়িয়ে থাকে যেমন, মণ্ডল গাঁতি, কামার পাড়া, শ্যামবসুর চক, হরিণডাঙ্গা ইত্যাদি। বীজ গ্রামের মূলনীতি হ’ল, এক জায়গায়, এক লপ্তে একই ফসলের, একই প্রজাতির বীজ উৎপাদন— যেমন সমাজে কোন একটা গ্রাম বা পাড়ায় একই ধরণের, শ্রেণীর, গোষ্ঠীর বা মানসিকতার লোকজন বাস করে।
কৃষক যদি তার নিজের বীজ নিজে উৎপাদন করে নিতে পারে তবে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যয় কমে তেমনই অন্যদিকে বীজের অপরের উপর নির্ভরতা কমে। বিশ্বায়ন, গ্যাট চুক্তি, পেটেন্ট আইন, বীজবিল—এ সবই কৃষককে বেশীদামে বীজ কিনতে বাধ্য করবে। বীজের উপর কৃষক তার অধিকার হারাবে অনেকটাই। এই পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্যও প্রয়োজন বীজগ্রামের। ফসলের প্রধান উপকরণই হলো ‘বীজ’, সেই বীজের উপরে কৃষকের নিয়ন্ত্রণ থাকা অত্যন্ত জরুরী। বীজগ্রামে এক একটি মাঠ ধরে এক একটি ফসলের বীজ উৎপাদন করা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো, বীজ সংশাকরণ সংস্থার কাছে নথিভুক্তির (Registration) মাধ্যমে সংশিত বীজও উৎপাদন করা সম্ভব। এককভাবে না করে কৃষক গোষ্ঠী বা দল বা সকলে যৌথভাবে আবেদন করলে পুরো বিষয়টি অনেক সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে যায়। উৎপাদিত বীজ কৃষক নিজে ব্যবহার করবে এবং অন্যের সাথে আদান প্রদান করবে। অতিরিক্ত বীজ সমবায়ের মাধ্যমে বিপণন করলে গ্রামীণ বেকার যুবকদের স্বরোজগারের পথও খুলে যাবে।
তাই, কৃষিও কৃষকের টিকে থাকার স্বার্থে, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ম্ভরতার লক্ষ্যে বীজ উৎপাদন করা, বিশেষ করে বীজগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে বীজ উৎপাদনে ঝাঁপিয়ে পড়া একান্ত প্রয়োজন।