অনাহুত গাছ উচ্ছেদ

(১২) অনাহুত গাছ উচ্ছেদ—

বীজের শুদ্ধতা বজায় রাখতে জমি থেকে অন্য জাতের গাছ, রোগ গ্রস্থ গাছ বা শীষ পর্যায়ক্রমে সরিয়ে ফেলতে হবে। গাছের উচ্চতা, গঠন, পাতার রঙ, ফুল আসার সময়, পতাকা পাতার অবস্থান, দানার গঠন, রঙ, শীষের চরিত্র প্রভৃতি দেখে অনাহূত গাছকে চিনে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। এই কাজ যত সুচারুভাবে করা যায় তত বীজের শুদ্ধতা বৃদ্ধি পায়। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসলকাটা পর্যন্ত এমনকি তার পরেও অনাহুত গাছ / শীর্ষ সরিয়ে ফেলতে হবে। বীজ উৎপাদনে এই কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৩) বীজের রোগ জীবাণু নিয়ন্ত্রণ—

গাছে ফুল আসার পর যদি বৃষ্টি হয় বা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া থাকে তবে বীজের উপর অনেক জীবাণু আক্রমণে বীজের রঙ তথা মান খারাপ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ফুল ফুটলে একবার এবং তার ১০ দিন পরে আরো একবার বিকেলের দিকে ট্রাইসাইক্লাজোল জাতীয় ওষুধ প্রতি ২ লিটার জলে এক গ্রাম মিশিয়ে অথবা কার্বেণ্ডাজিম জাতীয় ওষুধ প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। মনে রাখতে হবে ফুল আসলে সকালের দিকে গাছে স্প্রে করা উচিত নয়। ফুল আসার পর যদি আবহাওয়া রৌদ্রোজ্জ্বল ও শুকনো থাকে তবে স্প্রে না করলেও চলবে। অনেক সময় লক্ষীর গু বা False smut রোগের দ্বারা অনেক শীষ আক্রান্ত হয়। সেই শীষগুলো ফসল কাটার আগে সরিয়ে ফেলতে হবে। যে জমিতে এই রোগের প্রাদুর্ভাব প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় সেখানে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ, বিশেষ করে দ্বিতীয় চাপান না দেওয়াই ভালো। রোগ নিয়ন্ত্রণে কপার হাইড্রক্সাইড ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কপার হাইড্রক্সাইড স্প্রে করার পর গাছের রঙের সাময়িক একটা পরিবর্তন হয়, কিন্তু তা গাছের কোন ক্ষতি করে না। পরে এই রঙ আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। এই রোগের আক্রমণের মাত্রা ০.১ শতাংশের বেশী হলে সেখান থেকে বীজ সংগ্রহ করা উচিত নয়। বীজ শোধন করলে, নাইট্রোজেন সার কম দিলে এবং ফুল আসার আগে আগে পূর্বে বর্ণিত উপায়ে ওষুধ প্রয়োগ করলে এই রোগের আক্রমণ অনেক কমানো যায়।

১৪) ফসল কাটা—

গাছ ৮০ শতাংশ মতো পেকে গেলে ফসল কেটে নেওয়া ভালো। এই সময় বীজ শারীরবৃত্তীয়ভাবে পরিপক্ক হয়ে ওঠে। ফসল কেটে, ঝেড়ে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে বীজের বঙ, মান, জীবনীশক্তি অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা সবথেকে ভালো থাকে। ঝিরঝিরে বৃষ্টি বা অতিরিক্ত কুয়াশায় পাকা বীজের মান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কাটা ধান সম্ভব হলে সেই দিনই মাঠে ঝেড়ে তাড়াতাড়ি শুকোনোর ব্যবস্থা করা গেলে ভালো, অন্যথায় মাঠে ১-২ দিনের বেশী বীজ ধানের কাটা গাছ কখনই ফেলে রাখা উচিত নয়। রোদ, শিশিরে বীজের মানের অবনমন ঘটে। কাটা ধান গাছ ভিজে জমিতে বিছে পাই করে রাখলে অর্থাৎ এক আঁটি খড়ের উপর অপর আঁটির শীষগুলো বিছিয়ে রাখলে ধানে কাদা বা মাটি লাগে না, বীজ ভালো থাকে। বীজ ধানের কাটা গাছ কখনই সাধারণ ধানের মতো খামারে গোলা করে রাখা ঠিক নয়। এতে আর্দ্রতা, জীবাণু ও অধিক তাপমাত্রার প্রভাবে বীজের রঙ ও মান ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

১৫) বীজ ধান ঝাড়াই ও মাড়াই—

বীজ ধান ঝাড়ার আগে খামার ভালো করে পরিষ্কার করে বা পরিষ্কার পলিথিন বিছিয়ে নিতে হবে। ধান ঝাড়ার পাটাতনের ফাটলে বা ধান ঝাড়ার মেশিনে অনেক সময় অন্য ধান আটকে থাকে, সেগুলো আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে যাতে অন্য জাতের মিশ্রণ না হয়।

১৬) বীজ শুকানো ও পরিষ্কার করা—

বীজের আর্দ্রতা শুকিয়ে তাড়াতাড়ি কমিয়ে নিতে হবে। সকালের দিকে ধান পাতলা করে মেলে রোদে শুকোতে হবে। চড়া রোদে বীজ শুকানো উচিত নয়। রোদের নানা ধরণের রশ্মির প্রভাবে বীজের ভ্রূণের ক্ষতি হয়। তাই বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদ চড়া হলে বীজ ধান এক জায়গায় জড়ো করে তার উপর চট বা খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। রৌদ্র একটু কমলে বেলার দিকে আবার পাতলা করে মেলে বীজ শুকিয়ে নিতে হবে। এভাবে দু-তিন দিন শুকালে বীজের আর্দ্রতা ১৩ শতাংশের কাছাকাছি বা তার নিচে চলে আসে। শুকনো একটা ধান দাঁতে কাটলে যদি ‘কট্’ করে আওয়াজ হয় তবে বুঝতে হবে বীজের আর্দ্রতা সঠিকভাবে কমেছে। তখন বীজ ছায়াতে ঠাণ্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।

শুকনো বীজ ভালো করে কুলো বা যন্ত্রের সাহায্যে ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে, যাতে অপুষ্ট বীজ, ধূলো-বালি, চিটে ধান, খড়-কুটো ইত্যাদি না থাকে।

পড়া চালিয়ে যান —

১৭) বীজ সংরক্ষণ