বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ – এক নজরে

বীজ সংগ্রহ

বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ – এক নজরে

১) সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত গাছ থেকেই বীজ সংগ্রহ করা উচিত। যে ফল থেকে বীজ নেওয়া। হবে সেটি যেন সুস্থ ও প্রমাণ আকারের হয়।

২) বীজের আকারের সাথে সঞ্চিত খাবারের একটা সম্পর্ক আছে। সঞ্চিত খাবারের পরিমাণ কম হলে বীজের জীবনীশক্তি কমে যায়। আবার বেশি হলে পোকা লাগার ভয় থাকে। অতএব, মাঝারি আকারের বীজ বাছাই করতে হবে। ১/৩ ভাগ অতিক্রম

৩) যে গাছ অনেক বছর বাঁচে, তাদের ক্ষেত্রে গাছের জীবনচক্রের অন্তত করার পর সেই গাছের বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪) দানা শস্যের ক্ষেত্রে, গড়ে স্বাভাবিক রঙের বা আকারের যে বীজকে সঠিক গড়ন বা রং ধরে নিয়ে তার সাথে মিলিয়ে বীজ বাছাই করতে হবে।

৫) করলা, কুমড়ো, চিচিঙ্গার ক্ষেত্রে পাকা ফলের বীজ জলে ধুয়ে আঠালো ভাব দূর করতে হবে। জল ঝরিয়ে ছাইয়ে ঘষে, ৫-৭ দিন রোদে শুকিয়ে নেবার পর, সংরক্ষণ করতে হবে।

৬) লঙ্কা, ধুঁধুল, ঝিঙে, ঢেঁড়শ ইত্যাদির ক্ষেত্রে ফল পেকে শুকিয়ে গেলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। পরে লাগানোর সময় ফল ভেঙে বীজ বের করা হয়।

৭) শুঁটি জাতীয় সবজির বীজ প্রায় পেকে গেলে ডালশুদ্ধ গাছ থেকে তুলতে হয়। এবার ডালশুদ্ধ ফল দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে তার নীচে একটা বাটি রাখতে হয়। যাতে পাকা শুটি ফেটে গেলে বীজগুলি ওই বাটির মধ্যে পড়ে। লক্ষ্য রাখতে হ’বে শুটি যেন গাছেই ফেটে না যায়। কেননা শুঁটি ফেলে গেলে বীজগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শুঁটিগুলি জোর করে ফাটানো উচিত নয়, নিজে থেকে ফেটে গেলে তবেই বীজ সংগ্রহ করা উচিত। বীজ

শুকিয়ে নেবার পদ্ধতি একই, তবে ৮-১০ দিন সময় লাগে। বীজ শুকিয়ে নেবার পর, প্রতি ৫০০ গ্রাম বীজ এর সাথে ১ চা চামচ তেল (নিম, সরষে, করঞ্জা বা অন্য ঝাঝালো তেল) মাখিয়ে, কাঁচের বোতলে ভর্তি করে ভালোভাবে মুখ বন্ধ করে রাখতে হবে।

৮) শাকের বীজ সংগ্রহ করতে গেলে শাকের গাছ বাতাস চলাচল করে এমন পাতলা কাপড়ের একটা ব্যাগের মধ্যে রাখতে হবে, যাতে গাছ শুকানোর সাথে সাথে বীজ ধীরে ধীরে কাপড়ের মধ্যে ঝরে পড়ে।

৯) বীজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নুন-জলের ব্যবহার ও বীজ শোধন করার ক্ষেত্রে গো-চোনার ব্যবহার গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত আছে। ধানের বীজ লবণ জলে বাছাই করা যায় নুন জলের দ্রবণটি এইভাবে তৈরি করা যেতে পারে—প্রয়োজনমতো জল নিয়ে তাতে একটি মুরগির গোটা ডিম ফেলে দিতে হবে। দেখা যাবে ডিম জলের নীচে ডুবে গেছে। এরপর যতক্ষণ না জলের উপর ডিমটির মাথা সামান্য ভেসে ওঠে ততক্ষণ পর্যন্ত নুন দিতে হবে এবং নাড়তে হবে। এরপর সেই দ্রবণে ধানের বীজ ফেলে দিতে হবে, যেগুলি ভেসে উঠবে সেগুলি বাদে অন্য বীজগুলি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ ধান বাছাই করা হয়ে গেলে তাজা গোমূত্রের সাথে ৩-৪ গুণ জল মিশিয়ে অন্ততঃ ৪ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। লবণ জলে বাছাই ধান তরলসারে ৫-৬ ঘন্টা ডুবিয়ে নিয়ে রোপণ করলে বীজের জীবনীশক্তি বেড়ে যায়, ফলে বীজ থেকে সুস্থ সবল চারা পাওয়া যায়।


বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা

১) গাছের প্রথম দিকের ফল বা শেষ ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করা উচিত নয়। তিন-চারটি ফল খাওয়ার পর বীজের ফল বাছাই করতে হবে। বীজ সংগ্রহ করার পরেও যদি দেখা যায় গাছ বীজ বাহিত রোগে আক্রান্ত তবে সেই গাছ থেকে রাখা বীজ নষ্ট করে দিতে হবে।

২) বীজ সংগ্রহ করার সময় শুধু বড় ফল দেখলে হবে না। যে গাছগুলিতে কাঙ্ক্ষিত গুণাগুণ আছে, সেগুলি বেছে নিয়ে, তারপর ওই সব গাছের মাঝারি ও পুষ্ট ফলগুলি বীজ সংগ্রহের জন্য বাছতে হবে।

৩) বীজ একবার শুকনো করার পর যাতে আবার ভিজে না যায়, সেটা লক্ষ্য রাখা দরকার।

৪) কোনও একটি স্থানে কোনও একটি ফসলের বীজ সংগ্রহের কাজ একজনকে দিয়েই করানো উচিত নয়। একজনের ব্যর্থতাতে সমস্ত চেষ্টাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই কমপক্ষে ২-৩ জনের একই বীজ সংগ্রহের কাজ করা উচিত। শুধু একটি বা দু’টি গাছ থেকে বীজ নেওয়া উচিত নয়।

৫) কড়া রোদে সবজির বীজ শুকানো উচিত নয়। দানা শস্যের বীজ সকালের নরম রোদে (সূর্য ওঠার ঘন্টাখানেক পর) শুকাতে হবে।

৬) যে ফসলের বীজ সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেই বীজ কতদিন রাখা যায়, সেটা জানা দরকার। যেমন দানা, ডাল, তেল জাতীয় বীজ দু-তিন বছর এবং ধনে, জিরে ইত্যাদি ভেষজ মশলার বীজ এক বছরের বেশি রাখা যায় না। আবার কুমড়ো, ঝিঙে বা লাউ-এর বীজ পাঁচ-ছয় বছর পর্যন্ত রাখা যায়।

৭) বীজ সংরক্ষণ করার জন্য শুকনো, ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গা হ’ল সব থেকে উপযুক্ত। সবসময় ঠান্ডায় রাখা খুব একটা সহজ হয় না, সেজন্য বীজ শুকনো করে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীজ ভালভাবে না শুকিয়ে বোতলে, হাঁড়িতে বা প্যাকেটে ভরলে তাতে নানা রোগ-পোকা লাগার সম্ভাবনা বাড়ে।

৮) শিশি-বোতলে বা হাঁড়িতে ভরে রাখার আগে পাঁচ-সাতদিন ধরে বীজগুলো রোদে ছায়াতে শুকানো দরকার। হাল্কা রোদ ও বাতাস চলাচল বীজ শুকানোর জন্য ভালো।

৯) বীজ শুকানোর আগে পোকামাকড়ে খাওয়া, ভাঙা বা অর্ধেক পচা বীজগুলো আলাদা করা দরকার।

১০) বরবটি, সিম বা ডাল জাতীয় ফসলের বীজ রাখার সময় ১ চা-চামচ তেল এক বোতল (৫০০ মি.লি.) বীজে (সরষের তেল, করঞ্জা তেল, নিম তেল) মাখিয়ে ও ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিয়ে ঢাকনা বন্ধ করতে হবে। এতে পোকামাকড়ের হাত থেকে এই ধরণের বীজগুলো বাঁচানো যাবে।

১১) অন্যান্য সবজি বীজের জন্য, চালুনী দিয়ে ভালোভাবে চেলে নিয়ে পরিষ্কার ছাই মিশিয়ে রাখলে সহজেই পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচানো যায়। এইভাবে সবজি বীজ সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ঘুঁটের ছাই কিংবা ধানের তুষের ছাই খুব উপযোগী। এক বোতল বীজে (৫০০ গ্রাম) এক কাপ মত ছাই মেশাতে হবে।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *