হাইব্রিড ধানের বীজ উৎপাদন

ধান স্ব-পরাগ সংযোগী উদ্ভিদ—যার ফুলে একই সাথে পুংকেশর চক্র বা পরাগধানী থাকে ও গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রী মুণ্ড থাকে। পরাগধানী থেকে পরাগ এসে গর্ভকেশর চক্রে পড়ে ফলে, পরাগ মিলন হয়। পরে নিষিক্তকরণের মাধ্যমে ধানের বীজ তৈরী হয়। কিন্তু হাইব্রিড ধানের বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিষয়টা অন্যরকম। এখানে পুরুষ ও স্ত্রী ধান

গাছই আলাদা। স্ত্রী ধানের গাছের (Aline/Cytoplasmic male sterile line/cms line) সাথে পুরুষ ধানের (R-line / restorer line) সংকরায়ন ঘটিয়ে প্রথম প্রজন্মেই যে বীজ পাওয়া যায় তাই হাইব্রিড ধানের বীজ। বিজ্ঞানীরা বিশেষ প্রযুক্তি অবলম্বন করে স্ত্রী ধানের বীজ ও পুরুষ ধানের বীজ আলাদাভাবে তৈরী করেন।

এক একর হাইব্রিড ধান বীজ তৈরীর জন্য

স্ত্রী ধানের বীজ

  • Female / CMS / A Line (IR 58025A) = ৬ কেজি

পুরুষ ধানের বীজ

Male / Restorer Line (KMR 3R) = ২ কেজি

প্রাথমিক কাজ

  • প্রথমে বীজ একদিন রোদে আলাদা আলদাভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • হাত বাছাই করে জোড়ো ধান / মিশাল ধান / পাইল ধান বাদ দিতে হবে।
  • বীজ ১৬ ঘন্টা সাধারণ জলে ভিজিয়ে নেবার পর ৮ ঘন্টা ওষুধ মেশানো জলে ভিজিয়ে রেখে শোধন করতে হবে।
  • এক কেজি বীজের জন্য ১.৫ লিটার জল ও ৩ গ্রাম কারবেন্ডাজিম / থাইরাম ওষুধ লাগবে।
  • তারপর জাঁক দিয়ে বীজ কলিয়ে নিতে হবে।

বীজতলা তৈরী

  • আগের মরশুমে ধান চাষ হয়নি সম্ভব হলে এমন জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে
  • হবে। আগাছা এবং নিজের থেকে গজিয়ে ওঠা ধান গাছ নষ্ট করতে বীজ বোনার ৬-৭ দিন আগে ভালো করে চাষ দিয়ে বীজতলার জমি তৈরী করতে হবে।
  • ১০-১৫ সেমি উঁচু, এক মিটার চওড়া ও ১০মি. লম্বা করে অর্থাৎ ১০ বর্গ মিটারের এক একটি বীজতলা তৈরী করতে হবে।
  • বীজতলায় পাতলা করে বীজ বুনতে হবে। এতে চারা সুস্থ ও সবল হবে।
  • প্রতি বর্গ মিটারে ২০ গ্রাম বীজ বুনতে হবে।
  • ২ কেজি পুরুষ ধানের জন্য ১০ বর্গ মিটারের ১০ টি বীজতলা লাগবে।
  • ৬ কেজি স্ত্রী ধানের জন্য ১০ বর্গ মিটারের ৩০ টি বীজতলা লাগবে।
  • মোট ৪০০ বর্গ মিটারের বীজতলার জন্য পর্যাপ্ত জৈব সার, ৪.৪ কেজি ইউরিয়া, ১২.৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও ৩.২ কেজি পটাশ সার লাগবে।

বীজ বোনার সময়

 

প্রথম দিন ১/৩ ভাগ (৬৬৬ গ্রাম) ‘আর’ লাইন (R line)
চতুর্থ দিন ১/৩ ভাগ (৬৬৬ গ্রাম) ‘আর’ লাইন (R line)
সপ্তম দিন ১/৩ ভাগ (৬৬৮ গ্রাম) ‘আর’ লাইন (R line)
একাদশ দিন পুরো ৬ কেজি সি.এম.এস লাইন (CMS)
১ম দিন ১/৩ ‘আর’
৪র্থ দিন ১/৩ ‘আর’
৭ম দিন ১/৩ ‘আর’
১১তম দিন

সম্পূর্ণ ‘সি.এম.এস.’

মূল জমির কাজ

  • অন্য ধান গাছ থেকে কমপক্ষে ১০০ মি: অন্তরণ দূরত্ব রাখতে হবে।
  • যদি ১০০ মি: দূরত্ব না থাকে তবে আশপাশের ধানের জমিতে যেন ২১ দিন আগে পরের মধ্যে ফুল না আসে।
  • যদি দূরত্ব বা সময় দিয়ে অন্তরণ সম্ভব না হয় তবে ভূট্টা / আখ / ধৈঞ্চা / অড়হর / ৩০ মি: পুরুষ ধান দিয়ে প্রতিবন্ধক তৈরী করতে হবে অথবা ফুল আসার ঠিক আগে থেকে ২ মি: উঁচু পলিথিন দিয়ে মাঠ ঘিরে দিতে হবে।
  • বিঘা প্রতি ৫ কুইঃ জৈব সার দিয়ে জমিতে জল ঢুকিয়ে গভীর চাষ দিয়ে ভালো করে পচিয়ে নিতে হবে।
  • পরে প্রাথমিক সার দিয়ে ভালো করে চাষ দিয়ে সমতল করে জমি তৈরী করতে হবে।

সার প্রয়োগ বোরো মরশুমে (প্রতি একরে)

  • নাইট্রোজেন : ৪০ কেজি (৮৮ কেজি ইউরিয়া)   ১/৪ ভাগ প্রাথমিক + ১/৪ ভাগ ৭ দিন পরে + ১/৪ ভাগ ২১ দিন পরে + ১/৪ ভাগ থোড় আসার মুখে চাপান।
  • ফসফেট : ২০ কেজি (১২৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট), পুরোটাই প্রাথমিক
  • পটাশ : ২০ কেজি (৩২ কেজি মিউরিয়েট অব্ পটাশ) = ৩/৪ ভাগ প্রাথমিক + ১/৪ ভাগ থোড় আসার মুখে চাপান।

পড়া চালিয়ে যান

চারা রোপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *