বীজ আলু উৎপাদন: ফলন বৃদ্ধির জন্য ভালো মানের উন্নত জাতের বীজ আলু প্রয়োজন। ভালো বীজ আলুর দাম অত্যধিক এবং সবসময় প্রয়োজনীয় বীজ আলু পাওয়া যায় না। তাই চাষী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে চাষ করে নিজের প্রয়োজনীয় বীজ আলু নিজের জমিতেই ফলিয়ে নিতে পারে।
তার জন্য যে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সেগুলি হল—
১) জমিতে বসানোর জন্য উপযুক্ত জাতের নীরোগ, পুষ্ট, অক্ষত বীজ আলু নির্বাচন, বসানোর আগে বীজ শোধন করতে হবে।
২) উর্বর দোয়াঁশ মাটি ও জলনিকাশী এবং জলসেচ ব্যবস্থা যুক্ত, খোলা মেলা উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে।
৩) কার্তিক মাসে, ভালোভাবে কল বা অঙ্কুর হওয়া ১.৫-২ ইঞ্চি ব্যাসের আলু বীজ বসাতে হবে।
8) উপযুক্ত মাত্রায় সুষমভাবে সার প্রয়োগ ও উপযুক্ত পরিচর্যা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫) নিয়মিত নিরীক্ষনের মাধ্যমে রোগ পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে হবে এবং ভাইরাস আক্রান্ত গাছ সমূলে নষ্ট করতে হবে।
৬) আলু তোলার ১৫ দিন আগে গাছ কেটে দিতে হবে। এর ফলে আলুর ছাল পুরু ও শক্ত হবে।
৭) আলু তোলার পর অক্ষত, মাঝারি সাইজের আলু বেছে নিয়ে ৬ শতাংশ এম. ই. এম. সি. জাতীয় ছত্রাক নাশক (০.২ শতাংশ) গোলা জলে ২-৩ মিনিট ডুবিয়ে রেখে পরে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে এবং নতুন বস্তায় ভরে হিমঘরে সংরক্ষণ করতে হবে।
প্রকৃত আলুবীজ (টি.পি.এস.-টু পটেটো সীড)
বিজ্ঞান ভিত্তিক আলু চাষের নবতম অধ্যায় হ’ল প্রকৃত আলুবীজে (টি.পি.এস.-টু পটেটো সীড) আলুচাষ। প্রথাগত কন্দ থেকে আলুচাষে বীজ আলু অনেক বেশী লাগে। ফলে, বীজ ও শ্রমিকের জন্য খরচও অনেক বেশী পড়ে। তাছাড়া, কন্দ আলুর মাধ্যমে রোগ সংক্রমনের সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে এবং লাগাতার চাষ করার ফলে বীজ আলুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের হেরফের ঘটে যায় অর্থাৎ যে জাতের কন্দ থেকে বীজ রাখা শুরু হয়েছিল, বর্তমান বীজ থেকে তার অনুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। প্রকৃত বীজ আলু চাষের মাধ্যমে সর্বাধিক ফলন পাওয়া
সম্ভব। সংকর জাতের ব্যবহার সরাসরি চাষীর জমিতে করা সম্ভব প্রকৃত আলু বীজ চাষের মাধ্যমেই। এছাড়া, অত্যাধুনিক জীন প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে নীরোগ ও রোগ-পোকা সহনশীল বা প্রতিরোধক্ষম জাত চাষ করা সম্ভব। তাই, কন্দ-আলু বীজের থেকে প্রকৃত আলু বীজের মাধ্যমে চাষ করা সব সময়ই ভালো।
প্রকৃত আলু বীজ দুইভাবে ব্যবহার করা যায়
ক) বীজতলায় বুনে সেখানেই পরবর্তী বছরের জন্য বীজ আলু উৎপাদনের মাধ্যমে এবং
খ) বীজতলায় চারা তৈরি করে, সেই চারা মূল জমিতে লাগিয়ে বীজ আলু এবং খাওয়ার আলু (বড় সাইজের) উৎপাদন করার মাধ্যমে।
প্রকৃত বীজ আলু থেকে পুরোমাত্রায় খাওয়ার আলু পেতে গেলে দুই মরশুমে চাষ করতে হবে অর্থাৎ দুই বছর লাগবে।
ক) বীজতলায় বুনে বীজতলাতেই উৎপাদন পদ্ধতি
উর্বর বেলে দোআঁশ মাটিযুক্ত উঁচু জমি বীজ তলার জন্য বিশেষ উপযোগী। প্রকৃত আলুর বীজ খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের হয়। তাই, বীজ তলার মাটি খুব ভালো ভাবে ঝুরঝুরে করে তৈরী করা উচিৎ। মাটি তৈরি হয়ে গেলে সমস্ত বীজতলাকে কয়েকটি খন্ডে ভাগ করে নেওয়া হয়। লম্বালম্বি ৪ ফুট চওড়া নার্সারী বেডের মাঝে মাঝে ২ ফুট চওড়া ফাঁকা জায়গা রাখা হয়। ঐ ফাঁকা জায়গার মাটি দিয়ে নার্সারী বেড এর মাটি উঁচু করা হয়। মূল জমি থেকে ৬ ইঞ্চি উঁচু করে নার্সারী বেড তৈরি করা হয়। বীজতলা তৈরি হয়ে গেলে মাটির সাথে গোবর সার বা জৈব সার মেশানো হয়। প্রতি ৯০০ ব. ফুট বীজ তলার জন্য ৩৫০ কেজি গোবর সার প্রয়োজন। ঐ সার অল্প শুকিয়ে গুঁড়ো করে বালি-চালা চালুনি দিয়ে ভালো করে চেলে নিতে হবে। গোবর সার প্রয়োগের পর প্রতি ৯০০ ব: ফুট বীজতলার জন্য ১.৬ কেজি ইউরিয়া, ৬.২ কেজি সুপার ফসফেট ও ১.৬ কেজি পটাশ প্রয়োগ করতে হবে এবং পিঁপড়ে উইপোকা ইত্যাদির জন্য ৫০০ গ্রাম কার্বোফুরান ৩জি জাতীয় দানাদার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
এর পর নার্সারী বেড এর উপরি তল সমান করে দিতে হবে এবং ৪ ইঞ্চি দূরত্বে সারি করে ৪ ইঞ্চি দূরত্বে আঙ্গুল দিয়ে বা কাঠি দিয়ে ১/৪ ইঞ্চি গভীরে ২-৩ টি করে বীজ বসাতে হবে। কার্ত্তিক অঘ্রান মাসে বীজ বসালে ভালো হয়। বীজ ঢাকার জন্য চেলে নেওয়া গোবর সার (১৫০ কেজি) সারির উপরে ছড়িয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে ২৫ গ্রাম প্রকৃত আলু বীজ লাগবে। বীজ বোনার পর প্রথম ১০ দিন প্রতিদিন ২ বার এবং পরের ১০ দিন একবার করে ঝারির সাহায্যে হালকা সেচ দিতে হবে। প্রখর রোদের সময় বীজ তলায় আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাজ বোনার ১০ দিন
পর থেকে নিয়মিত আগাছা তুলে ফেলে দিতে হবে এবং যেখানে ২-৩ টে চারা হয়েছে সেখান থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে নিয়ে যেখানে চারা হয়নি সেখানে বসাতে হবে। চারা তোলার আগে এবং বসানোর পরে হালকা করে জলসেচ দিতে হবে। বীজ বোনার ১ মাস পর থেকে এক সপ্তাহ অন্তর ১ শতাংশ ইউরিয়া দ্রবণ মোট ৫ বার স্প্রে করতে হবে বা ঝারির সাহায্যে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবারে ৩৫০ লিটার জল লাগবে। এটি চাপান সারের কাজ করবে। বীজ বোনার ৩৫ দিন পর চারার গোড়ায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি দিতে হবে এবং ঝারি সাহায্যে জলসেচ দিতে হবে।
বীজ বোনার দেড় মাস পর থেকে দুটি নার্সারী বেড এর মধ্যবর্তী নীচু জায়গায় জল ঢুকিয়ে সেচ দিতে হবে। ঐ জল থেকেই বীজতলার মাটি ভিজে যাবে এবং থালা দিয়ে জল তুলে মাঝ বরাবর ভিজিয়ে দিতে হবে। এইভাবে ৩-৪ বার সেচ দিতে হবে। রোগ পোকার হাত থেকে চারাকে রক্ষা করার জন্য বীজ বোনার একমাস পর থেকে মিথাইল ডেমিটন বা ডাইমিথয়েট জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লি. জলে গুলে ৮-১০ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে। প্রতিবারে ৫ লিটার জল লাগবে। ধ্বসা বা অন্য কোন ছত্রাক ঘটিত রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ম্যানকোজেব জাতীয় ওষুধ ২.৫ গ্রাম/লি. জলে গুলে ১০-১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
এক্ষেত্রেও সমপরিমাণ জল লাগবে। বীজ বোনার ১০০ দিন পর আলু গাছ মাটির উপর থেকে কেটে ফেলতে হবে এবং তার ১০ দিন পর আলু তুলে নিতে হবে। দু তিন দিন ছায়ায় শুকিয়ে এবং নাড়াচাড়া করে মাটি ঝরিয়ে নিতে হবে। ১/২ ইঞ্চি ব্যাসের চেয়ে বড় আলু বীজ আলু হিসাবে বাছাই করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হিমঘরে সংরক্ষিত করতে হবে। এইভাবে চাষ করে প্রতি ৯০০ বর্গফুট বীজতলা থেকে ৪৫০ কেজি বা ৪০,০০০ – ৫০,০০০ বীজ আলু (Tuber) পাওয়া যায় যা দিয়ে পরের বছর ফসল হিসাবে ১ একর বা ৩ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করা যায়।
পড়া চালিয়ে যান—
(খ) বীজতলায় চারা তৈরি করে মূল জমিতে রোয়া করা পদ্ধতি
Reading your article has greatly helped me, and I agree with you. But I still have some questions. Can you help me? I will pay attention to your answer. thank you.