- এই পদ্ধতিতে বীজ উৎপাদন করলে তত্ত্ব ও বীজ দুই উৎপাদন সম্ভব।
- তত্ত্ব হিসেবে বপন করা পাট থেকেই বীজ উৎপাদন সম্ভব।
- পাট একটি Short day plant। যখন Critical day length মোটামুটি সাড়ে ১২ ঘন্টার কম হয়, তখন ফুল আসতে শুরু করে। তাই পাটের ফুল আসে সেপ্টেম্বর মাসের শেষে। তাই এই পদ্ধতিতে চাষ করলে ফুল আসার পূর্বেই তত্ত্ব যেমন বাজার জাত করা সম্ভব, তেমন অপরদিকে একই গাছ থেকে উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে বীজও পাওয়া যায়।
- এতে পাট তন্তুর উৎপাদন ও গুণমান কোনরকম ব্যহত হয় না।
- পদ্ধতিটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
- অনেক কম সময়ে উন্নত মানের বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন সম্ভব।
এই পদ্ধতিতে বীজ উৎপাদনের দুটি ধাপ—
ক) তদ্ভ উৎপাদন, খ) বীজ উৎপাদন
ক) তত্ত্ব উৎপাদন—
- তন্তু উৎপাদনের পদ্ধতি সুচারু ভাবে পালন করতে হবে।
- বীজ সারিতে বপন করলেই ভালো হয়।
- রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
- ১০০-১১০ দিন বয়সে পাট কাটতে হবে।
খ) বীজ উৎপাদন—
- একই জমি তন্তু ও বীজ উৎপাদনে ব্যবহৃত হলে জমিটি উঁচু বা মাঝারি হতে হবে।
- লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোন সময় জল না দাঁড়াতে পারে।
- প্রয়োজনে একবার চাষ দিতে হবে, তবে শূন্য কর্ষণ (Zero tillage) পদ্ধতিতেও সম্ভব।
- জুলাই মাসে পাট গাছের বয়স ১০০-১১০ দিন হলে ডগা থেকে ৬-৭ ইঞ্চি কেটে আগে থেকে তৈরী করা জমিতে বা শূন্যকর্ষণ (Zero tillage) করা জমিতে সারিতে (৩০ সেমি ×১০ সেমি) দূরত্বে লাগাতে হবে।
লক্ষণীয় বিষয়—
- ডগাগুলি কাটতে হবে পর্বের ঠিক নীচের অংশ থেকে। তাতে শিকড় তাড়াতাড়ি বেরোবে।
- পাট কাটার দিনই ডগাগুলি মাটিতে রোপন করলে সর্বাপেক্ষা ভালো ফল পাওয়া যায়।
- ডগার কর্তিত অংশে সেরাটেক্স হরমোন পাউডার (B1 – for soft wood) শিকড় বের হবে তাড়াতাড়ি, ফলে চারার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়বে।
- চারা রোপনের সময় বাতাসের উষ্ণতা বেশি থাকলে চারা রোপনের কাজ বিকেলে করতে হবে।
- মাটিতে উইপোকার সমস্যা থাকলে, ক্লোরপাইরিফস ২ মিলি / লিটার জলে মিশিয়ে মাটি শোধন করতে হবে।
- কোন কারণে পাট কাটার দিনই মূল জমিতে না লাগানো গেলে ডগা গুলিকে বীজতলাতে (nursery bed) রেখে ৮-৯ দিন পর মূল জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে লাগানো যেতে পারে।
- গাছ বড় হবার পর ডগা ছাঁটা চলবে না।
অন্তরণ দূরত্ব—
- পাট স্ব-পরাগ সংযোগী উদ্ভিদ
- কখনো কখনো ইতর পরাগ সংযোগও ঘটে। তিতা পাটের ক্ষেত্রে ২-৭ শতাংশ ইতর পরাগ সংযোগ হতে পারে। মিঠা পাটের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ ইতর পরাগ সংযোগ ঘটে না।
- অন্তরণ দূরত্ব : একই প্রজাতির বিভিন্ন জাতের / শ্রেণীর মধ্যে ফাউন্ডেশন বীজের জন্য ৫০ মিটার, সার্টিফায়েড বা সংশিত বীজের জন্য – ৩০ মিটার।
- ভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন জাতের / শ্রেণীর মধ্যে ফাউন্ডেশন / সার্টিফায়েড বীজের জন্য – ৩ মিটার।
অর্ন্তবর্তী পরিচর্যা—
- আগাছা নিয়ন্ত্রণ ২০-২৫ দিন মাথায় নিড়ানী দিতে হবে। বা
- ডগা রোপনের ১৫-২০ দিনের মাথায় আগাছানাশক হিসেবে কুইজ্যালোফস্ ইথাইল (বাণিজ্যিক নাম তরগা সুপার) ২ মিলি/লিটার জলে গুলে মাটিতে স্প্রে করতে।
- পাট গাছের পাতা পচে খুব ভালো জৈব সার তৈরী হয়। তাই তত্ত্ব হিসেবে পাট চাষ করা জমিতে বীজ উৎপাদন করতে হলে কোন অজৈব সার প্রয়োগ না করলেও চলে।
- বিঘা প্রতি – জৈব সার – ৭ কুইঃ
- চুন ৬০-২০০ কেজি
- নাঃ ফঃ পঃ- তিতা- ৮:৪৪
- মিঠা পাট – ৬ঃ৩ঃ৬
- মূল সার পুরো ফঃ + ১/২ পঃ
- ১ম চাপান (১ম নিড়ানীর পর) – ১/২ নাঃ + ১/৪পঃ
- ২য় চাপান (৩৫-৪০ দিন বয়সে) – ১/২ নাঃ + ১/৪ পঃ
সেচ—
- সাধারণতঃ বৃষ্টির জলেই পাট চাষ হয়।
- ফুল আসার সময় মাটিতে রস থাকা একান্তই প্রয়োজন। প্রয়োজনে হালকা সেচ দিতে হতে পারে।
- জমিতে যাতে জল জমে না যায় সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
অনাহুত উদ্ভিদ উচ্ছেদ (ROUGING)
- দুর্বল, রোগাক্রান্ত চারা জমি থেকে তুলে ফেলা দরকার।
- জমিতে ২-৩ বার অনাহুত উদ্ভিদ (ROUGING) উচ্ছেদ করতে হবে—
১) ৩০-৪০ দিনের সময় প্রথম বার।
২) ফুল আসা থেকে শুঁটি ধরার সময় দ্বিতীয় বার।
(৩) ফসল কাটার আগে শেষ বার।
- গাছের উচ্চতা, গাছের গোড়ার রঙ, কান্ডর অগ্রভাগ, কান্ডের গায়ের কাঁটা, পাতার আকৃতি, পাতার কিনারা, পাতার শিরা বিন্যাস, ফুল ও শুঁটির চেহারা দেখে অনাহুত গাছ গুলিকে চিনে তুলে ফেলতে হবে।
বীজের উৎপাদনশীলতা—
- বিঘা প্রতি ৮০-৯০ কেজি। অর্থাৎ যে পরিমাণ জমিতে বীজ উৎপাদন হবে, সেই উৎপাদিত বীজ দিয়ে পরবর্তী বছরে প্রায় ৮০-৯০ গুণ জমিতে পাট তন্তু উৎপাদন করা সম্ভব হবে। বীজ উৎপাদনে বিঘা প্রতি প্রায় ২,০০০ টাকা লাভ হতে পারে।
ফসল কাটা ও বীজ সংরক্ষণ
- বীজের রঙ বাদামী হলে পাট কাটা উচিত (নভেম্বর মাসের ২য় ৩য় সপ্তাহে)
- শুটি সম্পূর্ণ পাকার আগে কাটলে উচ্চমানের বীজ পাওয়া যায়।
- পাট কাটার পর জাঁক দেওয়া উচিত নয়।
- শুটি শুকিয়ে বীজ তাড়াতাড়ি আলাদা করে ভালো করে শুকিয়ে (৮-৯ শতাংশ আর্দ্রতা) নিতে হবে।
- শুকনো নিমপাতা/নিশিন্দাপাতা বীজের সাথে রেখে চটের বস্তায় শুকনো ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত।