Sanglap Rachana | সংলাপ রচনা

সংলাপ রচনা

সংলাপ হল কথোপকথন | কোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে যে কথোপকথন কল্পনা করা হয় তারই লিখিত রূপ হল সংলাপ। নাটকের সংলাপ রচনার সঙ্গে কাল্পনিক সংলাপ রচনার কিছুটা পার্থক্য আছে। নাটকীয় সংলাপে চরিত্রের আচরণগত নির্দেশও থাকে। কিন্তু কাল্পনিক সংলাপে বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনাই প্রধান।


• সংলাপ রচনার জন্য প্রথমে দেওয়া বিষয়টিকে মনে মনে ভালো করে ভেবে নেওয়া দরকার। বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে কথোপকথনের মাধ্যমে তা তুলে ধরা কঠিন হয়ে পড়ে।

• সংলাপের ভাষা হবে সহজ, সরল | মৌখিক ভাষার স্বাভাবিকতা বজায় রাখার দিকে নজর দিতে হবে।

• সংলাপ হবে চরিত্র অনুযায়ী। অর্থাৎ কল্পিত চরিত্রের বয়স, জীবিকা, সামাজিক অবস্থান প্রভৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার সংলাপ তৈরি করতে হবে।

• কাল্পনিক সংলাপে নাটকীয়তা সৃষ্টির সুযোগ নেই ঠিকই, কিন্তু সংলাপের মাধ্যমে সামান্য পরিমাণে নাটকীয় রস সৃষ্টি করতে পারলে ভালো হয়। এতে কথোপকথন অনেকটা স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।

• কোনো একটি চরিত্র একটানা অনেকক্ষণ কথা বললে একঘেয়ে লাগতে পারে। সেজন্য একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের সংলাপ যাতে বেশি বড়ো না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

• প্রয়োজনবোধে সংলাপের মধ্যে প্রবাদ-প্রবচন, বাগ্ধারা বা বিশিষ্টার্থক শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা যেন কখনোই অকারণ বা অপ্রাসঙ্গিক প্রয়োগ না হয়।

• সংলাপ একাধিক ব্যক্তির মধ্যে নিছক উক্তি-প্রত্যুক্তি কিংবা খোশগল্প নয়। এটি আসলে কোনো একটি বিষয়ের আলোচনা বা পর্যালোচনা | তাই বিষয় থেকে সরে গিয়ে অবান্তর কথোপকথন উচিত নয়।


(1) সংলাপ

সাম্প্রদায়িক হানাহানি বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কথোপকথন

অমিত : আচ্ছা শুনেছিস, কাল কারা আমাদের পাড়ার দুর্গাপুজো দেখতে এসেছিলেন?

সুজয় : হ্যাঁ শুনলাম, প্রচুর মুসলিম এসেছিলেন, শান্তির দূত হয়ে।

অমিত : ওঁদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল তাই। সারা পৃথিবী জুড়ে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধেই তাঁদের এই শান্তির বার্তা। প্রত্যেকেই সেজন্য সাদা পোশাক পরে এসেছিলেন। তুই দেখেছিস?

সুজয় : না, আমি তখন প্যান্ডেলে ছিলাম না। তাই দেখতে পাইনি | কিন্তু তাতে কিছুই যায় আসে না। ওঁদের কয়েকজনের এই ছোটো চেষ্টাটুকুই বৃহত্তর এক আশা বয়ে আনে। আর তার ছোঁয়াচ তো আমরা প্রত্যেকেই পাই | সত্যি বলতে কী, আমার বেশ গর্ববোধ হচ্ছে এই ভেবে যে, আমিও এই পাড়ার সুরে বিজ একজন সদস্য।

অমিত : ঠিক বলেছিস | আমাদের পাড়া বলেই কিন্তু এই সংহতি সম্ভব হল। কারণ, সত্যি এমন বহু জায়গা আজও এই পশ্চিমবঙ্গের বুকেই রয়ে গেছে, যেখানে হয়তো এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবি ফুটিয়ে তোলা সম্ভবই নয়। বলতে লজ্জা হয়, আমরাও এই রাজ্যেরই বাসিন্দা।

সুজয় : কিন্তু তারই মধ্যে আমাদের পাড়ার মতো জায়গাও তো রয়েছে, যেখানে এই অকারণ হানাহানির ছবিটা সরিয়ে দিয়ে আমরা একজোট হয়ে দাঁড়াতে পারি। এইটুকু দিয়েই শুরু, এই এক পা, এক পা করেই আমরা ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। সেদিন আর বেশি দূর নয়।


2) সংলাপ

বাংলা ভাষার স্বার্থে নতুন বাংলা বানানবিধির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে শিক্ষক ও ছাত্রের সংলাপ

অমল : স্যার, আপনি আমাদের খাতায় ‘বন্দী’ বানানটা কেটে ‘বন্দি’ করে দিয়েছেন। কিন্তু ‘বন্দী’ বানানটা কী ভুল?

শিক্ষক : হ্যা, অমূল। এই বানানটা ভুল। এককালে অবশ্য তোমার লেখা ওই বানানটাই ঠিক বলে মানা হত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির প্রচলিত বানাবিধি অনুযায়ী, ‘বন্দি’ বানানটাই ঠিক| ‘বন্দী’ বলতে বোঝানো হয় বন্দনাকারীকে | তুমি তো বাংলা বইতে পড়েছ, ‘অভিষেক’ কবিতার পঙ্ক্তি ‘অমনি বন্দিল বন্দী, করি বীণাধবনি।’

অমল : কিন্তু স্যার, এই বানানবিধিই বা কেন আমাদের মেনে চলতে হবে?

শিক্ষক : এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন | আসলে, প্রতিটি ভাষার ক্ষেত্রেই প্রামাণ্য কোনো ভাষিক নিদর্শনকে মান্য ভাষা বলে মেনে চলতে হয়। নইলে ভাষার কাঠামো বিশৃঙ্খল হয়ে পড়বে, যে যার ইচ্ছামতো ভাষার প্রয়োগ করবে। ফলে নিজস্ব আলাপচারিতার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হলেও বৃহত্তর পরিধিতে অর্থাৎ, সাহিত্যিক প্রয়োগ, প্রতিবেদনমূলক প্রয়োগ—ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভাষার একটি নমুনাকে যদি সকলের সামনে তুলে ধরতে হয়, তখন তো একটা সর্বজনগ্রাহ্য চেহারা প্রয়োজন! নইলে প্রত্যেকে যে যার নিজের মতো করে আলাদা আলাদা রকমে তার মানে বুঝবে অথবা বুঝবে না। বানানের ক্ষেত্রেও তাই একইরকমভাবে একটা সমতা রাখা প্রয়োজন। তাই এই বানানবিধি।

অমল : হ্যাঁ, একটি বানানবিধি যে বানান বিষয়ে সমতা বিধান করে, তা সত্যি। তা ছাড়া, বাংলা ভাষাকে জীবিত রাখতে এবং তাকে বিশ্বের দরবারে একটি প্রামাণ্য চেহারা দিতে হলে বানানের এই আদর্শ রূপদান যে খুবই জরুরি, তা আমিও স্বীকার করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *