বেগুন পার্ট ২ | বীজতলা থেকে চারা তোলা এবং মূল জমিতে চারা রোপণ - Deals Export

বেগুন পার্ট ২ | বীজতলা থেকে চারা তোলা এবং মূল জমিতে চারা রোপণ

বীজতলা থেকে চারা তোলা এবং মূল জমিতে চারা রোপণ—ভালো মানের বীজ উৎপাদনের জন্য ২৫-৩০ দিন বয়সের চারা মূল জমিতে লাগানো হয়। চারার শিকড় যাতে না ছেঁড়ে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। ২ ফুট × ২ ফুট দূরত্বে লাইনে বা সারিতে চারা লাগানো হয়। চারা রোপণের আগে প্রতি গর্তে ২-৩ গ্রাম কার্বোফিউরান-৩ জি মিশিয়ে চারা রোপণ করলে প্রথম ৩০-৪০ দিন বিভিন্ন শোষক পোকা আক্রমণ করতে পারে না।

বিকালের পড়ন্ত রোদে চারা রোয়া উচিত এবং চারা লাগানোর পরপরই জল দেওয়া দরকার।

বেগুন অন্তরণ দূরত্ব

অন্তরণ দূরত্ব (Isolation distance)—বেগুনের ক্ষেত্রে শতকরা ৬-৭ ভাগের মত ঈত্তর পরাগ সংযোগ ঘটে। তাই নির্দিষ্ট মানের উন্নত বীজ পাওয়ার জন্য বেগুনের অন্য ক্ষেতের থেকে বীজ উৎপাদনের ক্ষেতের মধ্যে ২০০ মিটার অন্তরণ দূরত্ব অবশ্যই রাখতে হবে।

ক্ষেত পরিদর্শন এবং অবাঞ্ছিত গাছের উচ্ছেদ—ক্ষেত সবসময় আগাছা মুক্ত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। নির্দিষ্ট মানের বীজ পেতে অন্ততঃ ৩ বার ক্ষেত পরিদর্শন করতে হবে এবং এই সময় অবাঞ্ছিত গাছ জমি থেকে তুলে ফেলতে হবে। ক্ষেতে রোগ পোকার আক্রমণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে।

Tormuj chas bangla | তরমুজ ও খরমুজ

(ক) প্রথম দর্শন—গাছে ফুল আসার আগে প্রথম পরিদর্শন করতে হবে। এই সময় গাছের ধরণ এবং পাতা নির্দিষ্ট জাতের সঙ্গে না মিললে সেই গাছ গুলিকে ক্ষেত থেকে তুলে ফেলতে হবে।

(খ) দ্বিতীয় পরিদর্শন—বেগুন গাছে ফুল আসলে দ্বিতীয় পরিদর্শন করতে হবে। এই সময় প্রতিটি গাছের কিছু বৈশিষ্ট দেখা হয়। যেমন

(১) ফুলের রঙ

(২) পাতা এবং কাণ্ডের রঙ

(৩) পাতায় কাঁটা আছে কি নেই

(৪) গাছের উচ্চতা

(৫) গাছের বিস্তার ইত্যাদি

যেসব গাছের এই বৈশিষ্টগুলি নির্দিষ্ট জাতের সঙ্গে না মেলে সেইসব অবাঞ্ছিত গাছ এই সময় ক্ষেত থেকে তুলে ফেলা হয়।

যেসব গাছে বেশী আগে বা পরে ফুল-ফল আসে সেই গাছ গুলিকেও বাদ দেওয়া হয়। রোগাক্রান্ত গাছও তুলে ফেলে দিতে হবে।

(গ) তৃতীয় পরিদর্শন—বেগুন গাছের ফল বড় হ’লে তৃতীয় পরিদর্শন করা হয়। এই সময় গাছের পূর্বেকার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সঙ্গে ফলের আকার, আকৃতি এবং রঙ বিবেচনা করা হয়।

ভালো মানের বীজ উৎপাদনে অণুখাদ্যের প্রয়োগ—অণুখাদ্যের অভাব জনিত জমিতে বীজ উৎপাদন করতে অবশ্যই প্রয়োজনমতো অণুখাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। অণুখাদ্যের অভাব জনিত লক্ষণ ও প্রতিকার –

(ক) বোরণ—এই অণুখাদ্যের অভাবে গাছের শাখা মুকুল প্রথমে হাল্কা সবুজ হয় এবং পরে শুকিয়ে যায়। বেগুনের ফল ও ডাঁটা ফেটে যায়। ফল ছোট এবং শক্ত হয়। কোন কোন সময়ে ফলের উপর ছোট ছোট কালো গর্ত দেখা যায়। ২০% বোরণ প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে চারা রোপণের একমাস পরে প্রথমবার এবং ২ মাস পরে দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।

(খ) জিংক—এই অণুখাদ্যের অভাবে পাতায় কমলা-হলুদ রঙের আভা দেখা যায়। গাছের নীচের বয়স্ক পাতা হলুদ থেকে বাদামী রঙের হয়ে যায়, পাতার শিরা গাঢ় বেগুনী রঙের হয়। এই পাতা অবশেষে ঝরে পড়ে। গাছের কচি পাতা এই অণুখাদ্যের অভাবে কোঁকড়াতে আরম্ভ করে। গাছে ফুল ফল কম হয়। চিলেটেড জিংক ১/২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে চারা রোপণের ৩ সপ্তাহের মাথায় প্রথম বার এবং ৬ সপ্তাহের মাথায় দ্বিতীয় বার গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।

বীজ উৎপাদনের জন্য ফল সংগ্রহ এবং বীজ নিষ্কাশন–ভালো গুণমানের বীজ পেতে বেগুন পেকে সম্পূর্ণ হলুদ হয়ে গাছ থেকে তুলে নেওয়া হয়। এই অবস্থা থেকে আগে বা পরে বেগুন তুলে নিলে ভালোমানের বীজ পাওয়া যায় না।

এরপর বীজ নিষ্কাশনের জন্য ফল গুলোকে কেটে, পিষে নেওয়া হয় এবং জল দিয়ে ধুয়ে চালুনীর সাহায্যে বীজ আলাদা করে নেওয়া হয়।

এছাড়া ফল কেটে বা পিষে নিয়ে বীজ গুলোকে ফল থেকে তুলে নেওয়া যায়। তবে যন্ত্রের সাহায্যে বীজ নিষ্কাশন করলে খরচ কম হয়, সময় কম লাগে এবং ভালো মানের বীজ পাওয়া যায়।

বেগুন বীজ সংরক্ষণ

বেগুন বীজ সংরক্ষণ—বীজ ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পালা স্তরে রোদ এবং বাতাসের মধ্যে শুকিয়ে নিতে হবে। ‘ড্রায়ার’ (Drier) যন্ত্রের সাহায্যে বীজ শুকনো করতে পারলে আরো ভালো হয়। বীজের আর্দ্রতা ৬-৮ শতাংশ-এর মধ্যে রাখা প্রয়োজন।

এই শুকনো বীজ শোধন করে কোন কাপড়ের ব্যাগে বা পাত্রে রেখে ঠাণ্ডা শুদ্ধ জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।

বীজের ফলন—২০-২৫ কেজি বীজ / বিঘা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *