জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ফলাফল

ইউরোপে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার বহুমুখী ফলাফল ও তাৎপর্য লক্ষ করা যায়। সপ্তদশ শতক

পুরাতন ভ্রান্তির অবসান

ষোড়শ থেকে ইউরোপে যে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার জন্ম হয়েছিল তা প্রাচীন টলেমি, অ্যারিস্টট্ল ও খ্রিস্টান চার্চের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড-সম্পর্কিত ধারণাকে তছনছ করে দিয়েছিল।

চার্চের ব্যর্থতা প্রমাণ

খ্রিস্টান চার্চ হয়তো ভেবেছিল যে, ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে বা গ্যালিলিয়োকে অন্তরিন করে রেখে তারা পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ করে দেবেন, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণাও। কিন্তু চার্চ ব্যক্তিকে পোড়ালেও তাঁর মতবাদকে পোড়াতে পারেনি। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে চার্চের সেই প্রয়াস সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। পঞ্চদশ শতকে নবজাগরণপ্রসূত আধুনিক বিজ্ঞানের উৎপত্তির প্রভাব বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। চার্চের দৌরাত্ম্য: বিজ্ঞানের এই নবনব আবিষ্কার প্রচলিত পোপতন্ত্র ও চার্চের চিন্তাধারার বিরোধী ছিল। নব্য বিজ্ঞান পোপ ও চার্চকে দারুণভাবে ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। ফলে বেশ কিছু মহান বিজ্ঞানীর জীবন চার্চের রোষানলে ধ্বংস হয়েছিল। বিচারের নামে প্রহসন করে চার্চ তাঁদের চূড়ান্ত শাস্তি দিয়েছিল।

ধর্মসংস্কারের পটভূমি

বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার অগ্রগতির ফলে প্রচলিত কুসংস্কারগুলি সম্পর্কে ইউরোপের মানুষ ক্রমে সচেতন হতে থাকে। এই সচেতনতা ইউরোপে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের পথ প্রস্তুত করে। মার্টিন লুথারের ধর্মসংস্কার আন্দোলন খ্রিস্টান চার্চের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ইউরোপের চিন্তাজগতে বিপ্লব ঘটায়।

বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রসার

বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার অগ্রগতি ইউরোপের সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্ঞানের প্রভূত প্রসার ঘটায়। বৈজ্ঞানিক চিন্তা ও প্রযুক্তির সহায়তায় জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বক্তব্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতি শুরু হয়েছিল। তবে আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সর্বাধিক অগ্রগতি ঘটেছিল পঞ্চদশ শতকের পরবর্তীকালে ইউরোপে। এই সময় ইউরোপে কৃষি, সামরিক শিল্প, উৎপাদন শিল্প, জাহাজনির্মাণ শিল্প প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে।