উত্তর) প্রথম অংশ : দলিত উন্নয়নে নারায়ণ গুরু : দলিত শ্রেণির সংহতিসাধন ও উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক পর্বে যে-সমস্ত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শ্রী নারায়ণ গুরু (১৮৫৬-১৯২৮ খ্রি.)। তিনি কেরালার এজাভা নামক দলিত পরিবারের সন্তান ছিলেন। শ্রী নারায়ণ গুরুর সংস্কারগুলি হল—
1. আত্মবোধ প্রতিষ্ঠা
কেরালার এজাভা শ্রেণি-সহ অন্যান্য অস্পৃশ্যদের মধ্যে আত্মমর্যাদা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সকল শ্রেণির মানুষের জন্য তিনি ৬০টির বেশি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সকল জাতি ও ধর্মের মানুষের জন্য এই মন্দিরগুলির দরজা খোলা ছিল।
2. শিক্ষার ওপর গুরুত্বদান
শ্রী নারায়ণ গুরু এজাভা সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ছাড়া তিনি উচ্চবর্ণের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি গ্রহণের মাধ্যমে এজাভাদের সংস্কৃতিকে উন্নত করার ব্যবস্থা করেন।
3. ভাইকম সত্যাগ্রহ
দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙ্কুরের ভাইকমে একটি মন্দিরের চারদিকে রাস্তা থাকলেও এজাভা, পুলায়া প্রভৃতি দলিতদের এই মন্দিরে প্রবেশাধিকার বা মন্দিরের রাস্তায় হাঁটার অধিকার ছিল না। তাই শ্রী নারায়ণ গুরু ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এই রাস্তা দলিত-সহ সাধারণ মানুষের ব্যবহার করার দাবিতে আন্দোলন করেন, যা ভাইকম সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় অংশ, মন্দির প্রবেশ আন্দোলন
দক্ষিণ ভারতের কেরালায়—এজাভা, পুলায়া প্রভৃতি নিম্নবর্ণের হিন্দু তথা দলিতরা হিন্দু-মন্দিরে প্রবেশ করতে পারত না বা মন্দির সংলগ্ন পথে যাতায়াতের অধিকার পেত না। দলিতদের প্রতি এই অসাম্য ও বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে শ্রী নারায়ণ গুরু, এন কুমারন আসান এবং টি কে মাধবন বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এভাবে গড়ে ওঠে মন্দিরে প্রবেশাধিকার আন্দোলন।
1 ভাইকম সত্যাগ্রহ
ভাইকম মন্দিরে প্রবেশ ও মন্দির সংলগ্ন রাস্তায় দলিতদের প্রবেশাধিকারের জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে উঠলেও (মার্চ, ১৯২৪ খ্রি.) বর্ণহিন্দুদের তীব্র বিরোধিতায় তা সফল হয়নি। ত্রিবাঙ্কুরের মহারাজার মৃত্যুর পর সেখানের মহারানির কাছে উদারপন্থী বেশ কিছু বর্ণহিন্দু আবেদন করেন। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়। শেষপর্যন্ত মহাত্মা গান্ধি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চে ত্রিবাঙ্কুরের মহারানি ও রাজকর্মচারীদের সঙ্গে আপসরফার মাধ্যমে মন্দিরের চারপাশের রাস্তায় দলিতদের ব্যবহারের অধিকার দেওয়া হয়। এভাবে ভাইকম সত্যাগ্রহ আংশিক সফল হয়।
2. গুরুবায়ুর মন্দিরে সত্যাগ্রহ
কেরালার গুরুবায়ুর মন্দিরে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে সুব্রম্মনিয়ান তিরুমান্বুরের নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ শুরু হয় (২১ অক্টোবর, ১৯৩১ খ্রি.)। অন্যদিকে এই মন্দিরে নিম্নবর্গদের প্রবেশাধিকার আটকাতে মন্দিরের চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দেওয়া হয়। মন্দির কর্তৃপক্ষ ও গোঁড়া হিন্দুরা সত্যাগ্রহী নেতা পি কৃয় পিল্লাই এবং এ কে গোপালনকে মারধরও করে। তা সত্ত্বেও গোপালন আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলেন।
পর্যালোচনা
এভাবে ভাইকম সত্যাগ্রহ ও গুরুবায়ুর সত্যাগ্রহ প্রাথমিক পর্বে সফল হয়নি। অবশেষে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ত্রিবাঙ্কুরের মহারাজা সরকার নিয়ন্ত্রিত সব মন্দিরগুলিতে সমস্ত হিন্দুদের জন্য প্রবেশাধিকার প্রদান করেন। পরের দুই বছরের মধ্যে কংগ্রেস শাসিত অন্যান্য প্রদেশগুলিতে অবস্থিত মন্দিরগুলিতেও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।