বীজতলা তৈরী
বীজতলার জন্য অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে যাতে অধিক বৃষ্টিতে ডুবে না যায় এবং তার চার পাশে উঁচু করে আল দিয়ে রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির জলে অন্য জমি থেকে বীজ ভেসে এই বীজ তলায় না আসে। যদি আগের মরশুমে ঐ জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকে তবে আগে থেকে ঐ জমিতে জল ঢুকিয়ে ভালো করে চাষ দিয়ে সাত দিন ধরে পঁচিয়ে পরে আবার ভালোভাবে চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরী করতে হবে। বীজতলাগুলি এক মিটার চওড়া ও প্রয়োজনমতো লম্বা করে মাটি থেকে ৫-১০ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরী করতে হবে, মাঝে এক ফুট চওড়া নালা থাকবে। বীজতলার জমির অবস্থান এমন হবে যাতে ভালোভাবে রোদ পায়।
গাছের ছায়া এসে পড়লে চারাগুলি লম্বা ও দূর্বল হবে। তাতে রোগ লাগার সম্ভবনাও বেশী। বীজতলার জমি তৈরী করার সময় উপযুক্ত পরিমাণ জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। তার পরিমাণ সাধারণ ধান চাষের মতোই। বীজতলায় খুব পাতলা করে বীজ বুনতে হবে—প্রতি শতক বীজতলায় ১ কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। বীজতলার জমি ভালোভাবে চাষ দিয়ে তৈরী করে নিলে এবং ছিপছিপে জল রেখে তাতে পাতলা করে বীজ বুনলেও ঘাসের সমস্যা হবে না। বীজ পাতলা করে বুনলে প্রতিটি চারা উপযুক্ত জায়গা, খাবার আলো বাতাস পেয়ে শক্ত সমর্থভাবে তৈরী হবে। এমনকি চারা অবস্থাতেই তাতে দু-তিনটি পাশকাঠি বের হয়ে যাবে। ফলে মূল জমিতে রোয়া করার সময় এরকম একটি করে চারা প্রতি ঘুপিতে লাগানো যাবে।
যা বীজ উৎপাদনের এক অন্যতম পূর্বশর্ত। বীজতলায় যদি কোনভাবে রোগের উপদ্রব লক্ষ্য করা যায় তবে উপযুক্ত রোগ নাশক প্রয়োগ করে তা সারিয়ে তবেই মূল জমিতে স্থানান্তরিত করা উচিত। বীজতলাতে যদি কোনভাবে অন্যজাতের চারা চোখে পড়ে তা অবশ্যই তুলে সরিয়ে ফেলতে হবে। চারার উচ্চতা, পাতার রঙ, গাছের গঠন, গাছের গোড়ার রঙ ইত্যাদি দেখে অন্য জাতের, এমনকি বীজ থেকে অন্যজাতের মতো চারা তৈরী হতে পারে। আর পাঁচটা চারা থেকে যে চারাগুলি অন্যরকম দেখতে তা অবশ্যই অন্য জাতের, তা সরিয়ে ফেলতে হব। বীজতলা থেকে চারা তোলার সময় যেন বীজতলায় জল থাকে। সেক্ষেত্রে চারার শেকড় কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জাত অনুসারে ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা রোয়া করা ভালো।
৬) অন্তরণ (ISOLATION)
যে কোন ফসলের বীজ তৈরী করার আগে তার ফুলে পরাগমিলনের চরিত্র সঠিকভাবে জেনে নেওয়া দরকার। কারণ পরাগ বংশগতি তথা জাতের বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক। পরাগ দিয়েই জাতের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। ধান স্ব-পরাগ সংযোগী উদ্ভিদ। তাই তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ধরে রাখার ক্ষমতা ইতর পরাগ সংযোগী উদ্ভিদ থেকে বেশী। ধান মূলতঃ স্ব-পরাগ সংযোগী উদ্ভিদ হলেও ০.১-৪ শতাংশ ইতর পরাগ সংযোগ হতে পারে। তাই অন্যজাত থেকে যদি কমপক্ষে ৩ মিটার অন্তরণ দূরত্ব না থাকে, পাশের জাতে একই সময় ফুল আসে তবে সেখান থেকে পরাগ এসে এই জাতের ফুলের মধ্যে পরে পরাগমিলন ঘটিয়ে জাতের বৈশিষ্ট্যের শুদ্ধতা নষ্ট করে দিতে পারে যা পরবর্তী প্রজন্মগুলিতে ক্রমশঃ প্রকাশিত হয়। বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদনের জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত সচেতনতার সাথে বিচার করতে হবে।
যদি ৩ মিটার অন্তরণ দূরত্ব একান্তভাবে রাখা সম্ভব না হয় তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে পাশের বা সংলগ্ন অন্য জাতের জমিতে একই সময় ফুল না আসে। অনেক সময় জমির আল বরাবর ধৈঞ্চা বা সবজি চাষের জন্য ২ থেকে আড়াই মি: উঁচু করে আড়াল তৈরী করে পরাগ চলাচলের পথে প্রতিবন্ধক তৈরী করা যেতে পারে। যদি এসব কিছুই সম্ভব না হয়, তবে সেদিকে অন্য জাতের সাথে ফুল আসার সময়ে বা অবস্থানে কোনরকম অন্তরণ নেই, সেইদিক থেকে তিন মিটার ছেড়ে ভেতরের দিক থেকে বীজ ধান সংগ্রহ করতে হবে। অন্যজাত সংলগ্ন তিন মিটার চওড়া জমির ধান খাবার ধান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
[…] ৫) বীজতলা তৈরী […]